এখন পানির অভাবে ধুঁকছে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক

0

চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী সিরিয়ার অঞ্চলে আঘাত হানে। এতে দুই তুরস্কে ৫০ হাজারেরও বেশি এবং সিরিয়ায় কমপক্ষে আট হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। আহত হয় আরও বহু মানুষ।

ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়ে প্রাণে বেঁচে থাকা ভাগ্যবান মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে অসুস্থতা। ধুলোময় অবস্থার কারণে দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভোগার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দক্ষিণ তুরস্কের আন্তাকিয়ার উপকণ্ঠে ধুলোময় জমিতে এখন পানির হাহাকার। ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া শত শত মানুষ এখন গ্রীষ্মের জ্বলন্ত সূর্যের নিচে পানির জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ধুঁকছে।

গত ছয় মাসের চেষ্টায়ও প্রশাসন ভূমিকম্পে ফেটে যাওয়া পাইপগুলো সংস্কার করতে সক্ষম হয়নি। ফলে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত অঞ্চলজুড়ে পানি এখন এক মহামূল্যবান পণ্য হয়ে উঠেছে।

হাতায় প্রদেশের রাজধানী আন্তাক্যাতে বেঁচে থাকার মৌলিক প্রয়োজনগুলোর অন্যতম পানি পেতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরীয় তাপপ্রবাহের কারণে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ফারেনহাইট) ওপরে বেড়েছে। ফলে একদিকে মানুষসহ এ অঞ্চলের প্রাণিজগতের পিপাসার পরিমাণ যতটা বেড়েছে পানি ততটাই দুষ্প্রাপ্র হয়ে উঠেছে।

ছয় মাস আগে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের পর থেকে অস্থায়ীভাবে যারা তাঁবু বা কনটেইনারে বসবাস করছে তাদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের ফলে ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়া ধ্বংসস্তূপ ও তা থেকে সৃষ্ট ধুলো মেঘের কারণে তাপ আরও বেড়েছে।

ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট থেকে এক ডজন পানির বোতল সংগ্রহ করেছেন ৪৩ বছর বয়সী আয়হান তেকিন।

তিনি বলেন, “‌আমরা পানি, খাবার ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। আমরা ধুলো ও ধোঁয়া থেকে বের হতে পারছি না। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলেই আমরা বুঝতে পারি গোসল করা কতটা জরুরি। কিন্তু আমরা গোসল করতে পারি না। আমরা কোনো কিছু পরিষ্কার পর্যন্ত করতে পারি না। সবকিছু নোংরা থাকার কারণে সর্বত্র মাছি ও কীটপতঙ্গ ঘিরে ধরে।”

হাতায় মেডিকেল চেম্বারের প্রধান সেভদার ইলমাজ বলেছেন, “‌আমাদের এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা ধ্বংসস্তূপ অপসারণ ও ভবনগুলো ভাঙার সময় পানি ব্যবহার করা হয়নি। ভবন ভাঙার সময় পানি ব্যবহার করতে হয়, যাতে ধূলিকণা বাতাসে ছড়াতে না পারে। কিন্তু পানির অভাবে এখানে ভাঙার সময় ধুলা নিবারণ করা যায়নি। এটি ভবিষ্যতে অনেক রোগের কারণ হবে। চোখের অসুখ, গলার অসুখসহ নানা রোগের কারণ হবে। এরই মধ্যে কাশি ও শ্বাসকষ্ট এখানে সাধারণ অসুস্থতায় পরিণত হয়েছে।”

ইলমাজ বলেছেন, ভবিষ্যতে হাঁপানির মতো রোগ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ফুসফুস, গলা ও স্বরযন্ত্রের ক্যান্সারের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঘটনা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক বর্তমানে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধির অভাবে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে।  সূত্র: আল জাজিরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here