তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে বলে জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
বৃহস্পতিবার রায়ের পর সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায়ের ফলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা কার্যত নির্বাসিত হয়েছিল, যার প্রভাবে পরবর্তী তিনটি নির্বাচন বিতর্কের মুখে পড়ে। তার মতে, আজকের রায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ খুলে দেবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সংগ্রাম ও অব্যাহত প্রচেষ্টার পর আদালত রিভিউ পিটিশন গ্রহণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছে।
বদিউল আলম মজুমদার আরও উল্লেখ করেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পর থেকেই তিনি এ বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মনে করেন, ওই রায়টি অসাংবিধানিক ছিল। একইভাবে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়েও তিনি আপত্তি তুলে ধরেছিলেন।
এসময় বদিউল আলম মজুমদারসহ আপিলকারী চার বিশিষ্ট ব্যক্তির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, আজকের রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেওয়া রায় সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার সংবিধানে ফিরে এসেছে। তার মূল্যায়নে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ রায় অত্যন্ত ঐতিহাসিক।
এর আগে, এদিন সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর ছয় বিচারপতি হলেন- বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
গত ১১ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানি শেষে ২০ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন সর্বোচ্চ আদালত। শুনানিতে বিএনপি, জামায়াত ও আপিলকারীদের আইনজীবীরা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলেও আগামী নির্বাচন হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে। তবে চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন তৎকালীন আপিল বিভাগ। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে নতুন করে আইনি লড়াই শুরু হয়।
চলতি বছরের ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করেন সর্বোচ্চ আদালত। এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ ৫ জন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার আপিল করেন।

