উচ্চ রক্তচাপের রোগী: কী ব্যায়াম করবেন

0

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। কারণ এটি রক্তচাপ কমাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে। তবে এটি শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি সব ধরনের ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ বা শারিরীক ব্যায়ামই করতে পারবেন। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন- রোগীর বয়স, ওজন, উচ্চতা ও শারীরিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে ব্যায়ামের ইনটেনসিটি বা তীব্রতা কেমন হবে তা একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক নির্ধারণ করে থাকেন। 

১. হাঁটা 
– সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ ব্যায়াম। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
– কিভাবে হাটবেন- প্রাথমিকভাবে ধীর গতিতে শুরু করে ধীরে ধীরে গতি বৃদ্ধি করুন। সমতল এবং নিরাপদ স্থানে হাঁটুন।

 ২. সাইকেল চালানো
– এটি একটি কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম যা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
– কিভাবে করবেন: রাস্তায় বা স্ট্যাটিক সাইকেল ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিটের জন্য চালান।

৩. সাঁতার
– সাঁতার শরীরের সমস্ত পেশীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের উপর কম চাপ সৃষ্টি করে।
– কিভাবে করবেন: সপ্তাহে ২-৩ দিন প্রতিদিন ৩০ মিনিটের জন্য সাঁতার কাটুন।

৪. যোগব্যায়াম
– রিল্যাক্সেশন এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক। বিভিন্ন স্ট্রেচিং এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
– কিভাবে করবেন: যোগব্যায়ামের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রতিদিন সকালে ২০-৩০ মিনিট যোগব্যায়াম করুন।

৫. অ্যারোবিক ব্যায়াম
– এই ব্যায়ামগুলি হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
– কিভাবে করবেন: প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিটের জন্য জগিং, নাচ, বা জাম্পিং জ্যাকস করুন।

৬. হালকা ওজন উত্তোলন
– মাংসপেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ফিটনেস বাড়ায়।
– কিভাবে করবেন: কম ওজন দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি করুন। প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট ব্যায়াম করুন।

 উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কখন ব্যায়াম করা যাবে না বা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তা নিম্নরূপ:

১. রক্তচাপ অত্যন্ত বেশি হলে
যদি রোগীর রক্তচাপ খুবই বেশি হয় (উদাহরণস্বরূপ, ১৮০/১১০ mmHg বা তার বেশি), তবে ব্যায়াম করা উচিত নয়। এই অবস্থায় প্রথমে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

২. অনিয়মিত ওষুধ গ্রহণ
যদি রোগী উচ্চ রক্তচাপের জন্য নির্ধারিত ওষুধ নিয়মিতভাবে না খেয়ে থাকে বা নতুন কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সমস্যা অনুভব করে, তবে ব্যায়াম থেকে বিরত থাকা উচিত।

৩. ব্যায়ামজনিত তীব্র শারীরিক অসুস্থতা
যদি ব্যায়াম করার সময় বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অত্যধিক মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে ব্যায়াম বন্ধ করা উচিত এবং দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

৪. অবস্থাগত পরিবর্তন 
যদি কোনো কারণে রোগীর শারীরিক অবস্থা হঠাৎ পরিবর্তন হয়, যেমন নতুন কোনো রোগ শনাক্ত করা, হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়া, বা সম্প্রতি কোনো বড় অপারেশন হয়ে থাকলে, ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

৫. গর্ভাবস্থা এবং অন্যান্য জটিলতা
গর্ভাবস্থার সময় উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এছাড়া, অন্যান্য জটিলতা যেমন হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি থাকলে ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

পরামর্শ
– ব্যায়াম করার আগে এবং পরে রক্তচাপ পরীক্ষা করুন।
– ব্যায়ামের সময় সঠিক পোশাক ও জুতো পরুন।
– ব্যায়ামের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
– ধীরে ধীরে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ান এবং যদি কোনো অস্বস্তি বা সমস্যা হয় তবে ব্যায়াম বন্ধ করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক: চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট, 

ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা ।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here