ইসরায়েলি নৃশংসতা, মাটিতে পড়ে ছিল পিঠে গুলিবিদ্ধ অনেকগুলো লাশ

0

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। প্রথমে বিমান হামলা চালালেও ২৮ অক্টোবর থেকে স্থল হামলাও শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় ২৫ হাজার ২৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়াও আহত হয়েছে আরও ৬৩ হাজার ফিলিস্তিনি।

দীর্ঘ সাড়ে তিন মাসের এই যুদ্ধে বহু সংখ্যক বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি নারীদের নির্যাতন–মারধরও করছে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের বর্বরতার বিভিন্ন চিত্র প্রকাশ্যে আসছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত ও হত্যার ঘটনার ভিডিও চিত্র দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

ফিলিস্তিনিদের ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যার এসব ঘটনা নিয়ে কাজ করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এসব ঘটনা নথিবদ্ধ করছে।

এদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা গত ১৯ ডিসেম্বরের নৃশংস একটি ঘটনার বিষয়ে এক পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা ও সেই ঘটনার ভিডিও চিত্র পেয়েছে।

ইসরায়েলি সেনারা গত ডিসেম্বরে যে ফিলিস্তিনিদের এভাবে হত্যা করেছে, তাদের একজন ছিলেন উম ওদাই সালেমের স্বামী।

ওদাই সালেম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “(ইসরায়েলি সেনারা ট্যাংক ও বুলডোজার নিয়ে আসে। তারা পুরো ভবন ঘিরে ফেলে। এরপর কয়েক দিন ধরে ভবনটি লক্ষ্য করে গোলা ছোড়ে।”

তিনি আরও বলেন, “সেনারা আমাদের দরজায় এসে চিৎকার করে ডাকাডাকি শুরু করে। তখন আমার স্বামী তাদের বলেন- ‘আমরা বেসামরিক’। এরপরও তারা আমার স্বামীকে ধরে অন্য একটি ভবনে নিয়ে যায়। আমি তাদের পিছু পিছু সেখানে যাই। তাদের কাছে আকুতি জানাই- আমরা বেসামরিক, দয়া করে আমার স্বামীকে ছেড়ে দাও’।”

ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জানিয়ে এই ফিলিস্তিনি নারী বলেন, “তারা (ইসরায়েলি সেনারা) আমাকে ও আমার মেয়েকে মারধর করে। আমাদের ধরে নিয়ে অন্য একটি জায়গায় রাখে। বন্দুক ও ছুরি দেখিয়ে হুমকি দেয়। আমাদের কাপড়চোপড় খুলতে বাধ্য করার পর তল্লাশি চালায়। বাজে ও অকথ্য ভাষায় আমাদের নানাভাবে গালিগালাজ করতে থাকে।”

উম ওদাই সালেম জানান, তাদের আকুতি সত্ত্বেও ইসরায়েলি সেনারা যেসব পুরুষকে ধরে নিয়ে এসেছিল, তাদের সবাইকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। 

সালেম বলেন, “ওই ভবনে যে ১৯ জনকে হত্যা করা হয়, তাদের একজন ছিলেন আমার স্বামী।”

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, অনেকগুলো মরদেহ মাটিতে পড়ে আছে। তাদের পিঠ বুলেটবিদ্ধ। সবাইকে গুলি করে হত্যার পর সালেম তার মেয়েকে নিয়ে যে ভবনটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানে গোলাবর্ষণ করতে শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সালেমের এক মেয়ে বলেন, গোলার আঘাতে তার তিন বছরের এক বোন মারা গেছে।

সালেমের মেয়ে বলেন, “আমার কোলে ছিল তিন বছর বয়সী বোন নাদা। গোলাবর্ষণ শুরু হলে তা নাদাকে আঘাত করে।”

লন্ডনের মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ের একজন অধ্যাপক উইলিয়াম শ্যাবাস। ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও নির্যাতন প্রসঙ্গে বললেন, ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বর্ণনা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) প্রমাণ হিসেবে উত্থাপনযোগ্য। 
অধ্যাপক উইলিয়াম শ্যাবাস বলেন, “এই মানুষগুলো যে বেসামরিক নাগরিক, সেটা প্রমাণ করারও সত্যিকার অর্থে দরকার নেই। এমনকি যোদ্ধা ও যুদ্ধে অংশ নেওয়া কোনও সেনাকে এভাবে হত্যার ঘটনা যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য।”

ডেনমার্কের কোপেনহেগেনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইউরো–মেডিটেরেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের মুহাম্মাদ শেহাদা মনে করেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের পদ্ধতিগতভাবে হত্যার ঘটনা ঘটছে।

ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা প্রত্যক্ষদর্শী ও হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন। সূত্র: আল জাজিরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here