গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। এরপর ২৮ অক্টোবর থেকে ওই উপত্যকায় স্থল হামলাও শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এরই মধ্যে ভয়াবহ আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজারে। এর মধ্যেই ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে ৫২ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যেও ১৫ হাজারের বেশি নারী ও শিশু। এছাড়াও আট হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিখোঁজ রয়েছে।
তা সত্ত্বেও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’— মর্মে সমানে সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। তারা চলমান বোমা হামলার তীব্রতার কথা বলছে খুব সামান্যই।
গাজার সমর্থনে ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বিক্ষোভ হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। বিক্ষোভ মিছিলের সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশকে ব্রিটেনে অনেক রাজনীতিক একটি ঘৃণাব্যাঞ্জক কাজ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের গায়ে সন্ত্রাসের সহযোগী শক্তি হিসেবে তকমা এঁটে দিতে চাচ্ছেন।
ফিলিস্তিনিদের পতাকা উড়িয়ে অথবা ‘নদী থেকে সাগরে ফিলিস্তিন’ শীর্ষক স্লোগান দিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশকে রাজনীতিকেরা যতই নিন্দাসূচক কাজ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন, ব্রিটেনের অনেক সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন।
গাজার বিরুদ্ধে আজকের চলমান যুদ্ধ যুক্তরাজ্যের জনগণ ও তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের মানসিক ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভাজনের রাজনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা অনেকেও এই তথাকথিত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে আমাদের এই সময়ের সবচেয়ে তীব্র বিভাজনকারী ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
এর মাধ্যমে এটি পরিষ্কার যে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন অনেক বেড়েছে।
প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন নামের একটি আন্দোলন সংগঠনের হিসাব মতে, লন্ডনে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা দেড় লাখ থেকে তিন লাখ এবং সর্বশেষ আট লাখে উন্নীত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডব ও গণহত্যার ভয়াবহ মাত্রা সাধারণ মানুষের বিবেককে মারাত্মকভাবে নাড়া দিয়েছে এবং অনেকে রাতারাতি আন্দোলন কর্মীতে পরিণত হয়েছেন।
দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের ওপর জুলুম চালানোকে সমর্থন দেওয়ার কারণে পশ্চিমা সরকারগুলোর প্রতি ক্ষোভ ও অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়েছে।
ফিলিস্তিন সমর্থক আন্দোলনকর্মীদের ইসরায়েলবিরোধী ভাষা প্রয়োগের এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসরায়েল বিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়ার কারণে ব্রিটিশ পুলিশ ইতোমধ্যে অনেককে আটক করেছে।
শিক্ষার্থীদের অনেকে বলেছেন, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের অ্যান্টি টেররিজম প্রিভেন্ট প্রোগ্রামের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসরায়েলবিরোধী বক্তব্য পোস্ট করলে তাদের অ্যান্টি টেররিজম প্রিভেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় আনা হতে পারে বলে তারা সতর্ক করছেন।
তবে এত কিছুর পরও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাজ্যে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের মাটিতে ফিলিস্তিনিরা এমন একটি ন্যায্যতাবাদী গোষ্ঠী খুঁজে পাচ্ছেন, যাদের আন্দোলন তৎপরতা ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
লন্ডনভিত্তিক ব্রিটিশ-সিরিয়ান উদ্যোক্তা ওমার লাবাবেদি হোয়াটসঅ্যাপে ফিলিস্তিন আন্দোলনের সমর্থনে একটি গ্রুপ খুলেছিলেন।
শুরুর দিকে তাতে দেড়শ’ জনের মতো সদস্য ছিলেন। সেই গ্রুপ থেকেই পরে আন্দোলনকারীদের বড় একটি সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এই নেটওয়ার্কটি মিছিল, সমাবেশের পাশাপাশি গণমাধ্যমে ফিলিস্তিন ইস্যুর সংবাদ পরিবেশনা পর্যবেক্ষণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে থাকে।
‘প্যালঅ্যাক্টিভিজম’ নামের এই গোষ্ঠী যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকর্মীদের পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়।
লাবাবেদি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু লোকজনকে সংগঠিত করার এই কাজ তার প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলেছে।
ফিলিস্তিনের সমর্থনে সভা সমাবেশ করে ও বক্তৃতা-ভাষণ দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নাগরিক ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে গেছেন। তেমনই একজন হলেন ড. ওমার আবদেল মান্নান।
এই আন্দোলনের পক্ষে নেমে তিনি রীতিমতো তারকা বনে গেছেন। ব্রিটেনের টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলগুলোতে তিনি একটি উচ্চকিত কণ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন।
এই ধরনের ব্যক্তিদের আলোচনা ও ভাষণ মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রচার করা ভাষ্যকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমেই ব্রিটেন ও ইউরোপের একটি বিরাট অংশে গাজার গণহত্যার প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় নামছে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই