ইউক্রেনের কুরস্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের পর সেখানে মৃতদেহ খুঁজতে গিয়ে ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী এক চমকপ্রদ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। তুষারঢাকা এলাকায় পাওয়া গেছে উত্তর কোরিয়ার বেশ কিছু সেনার মৃতদেহ। এর মধ্যে একজন সেনা তখনো জীবিত ছিলেন।
তবে, ইউক্রেনীয় সেনারা কাছে যেতেই ওই উত্তর কোরীয় সেনা নিজের গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হন। ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ধরা পড়ার ভয় থেকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই সেনা।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, এমন আত্মঘাতী ঘটনা প্রমাণ করে, উত্তর কোরিয়ার সেনারা কী মাত্রায় মস্তিষ্কধোলাইয়ের শিকার। তাদের শেখানো হয়েছে যে, ধরা পড়া মানে দেশদ্রোহিতা। ইউক্রেনীয় এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায়, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের মধ্যে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মাহুতি দেওয়ার প্রবণতা বেশি।
একজন উত্তর কোরীয় পলাতক সেনা, কিম (৩২), রয়টার্সকে বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সেনারা শিখেছে, ধরা পড়া মানে বিশ্বাসঘাতকতা। তাই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।’
কিম আরও জানান, অনেক সেনাকে বলা হয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে ধরা পড়ার চেয়ে নিজেকে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া বেশি সম্মানের। তিনি নিজে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন এবং রাশিয়ায় নির্মাণ প্রকল্পে অংশ নিয়েছিলেন।
ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রায় ১১,০০০ উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে, যার মধ্যে ৩,০০০ জন নিহত বা আহত হয়েছেন। যদিও রাশিয়া এবং পিয়ংইয়ং এই তথ্য প্রথমে ‘মিথ্যা সংবাদ’ বলে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পরে এর সত্যতা অস্বীকার করেননি।
সম্প্রতি ইউক্রেন দুই জন ধৃত উত্তর কোরীয় সেনার ভিডিও প্রকাশ করেছে। একজন সেনা ইউক্রেনে থেকে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, আরেকজন ফিরে যেতে চান উত্তর কোরিয়ায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কমিটির সদস্য লি সিয়ং-কুন জানান, মৃত উত্তর কোরীয় সেনাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মেমোতে ধরা পড়ার আগে আত্মাহুতি দেওয়ার নির্দেশ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, একজন উত্তর কোরীয় সেনা ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার শঙ্কায় চিৎকার করে কিম জং উনের নাম নিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেন।
উত্তর কোরিয়ার এই সেনা মোতায়েন তাদের ১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের পর প্রথম বড় ধরনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ। পিয়ংইয়ং এবং মস্কোর এই সামরিক জোট ইউক্রেনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
এমন আত্মঘাতী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উত্তর কোরিয়ার সেনাদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকে বিশেষ নজরে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল