ইউএসএইড বন্ধের প্রচেষ্টা স্থগিতের নির্দেশ ফেডারেল বিচারকের

0

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টা ইলোন মাস্কের বেপরোয়া আচরণ থামিয়ে দেয়ার মত কঠোর একটি পদক্ষেপের আদেশ দিয়েছেন ম্যারিল্যান্ড স্টেটে অবস্থিত ফেডারেল আদালতের বিচারক থিউডোর ডি চুয়াং। মঙ্গলবার প্রদত্ত এ আদেশ অনুযায়ী ইউএসএইড বিলুপ্তি রোধ হলো এবং এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইউএসএইড পুনর্বহাল হলো।

বিচারক আরও উল্লেখ করেছেন, সারাবিশ্বে মানবতার কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্রের বহু পুরনো একটি রেওয়াজকে ভেঙ্গে দেয়ার এমন উদ্যোগে সংবিধান লঙ্ঘনের মত আচরণও পরিলক্ষিত হয়েছে। কংগ্রেসের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। বিচারক থিউডোরের ডি চুয়াংয়ের আদেশটি ইলোন মাস্কের ক্ষমতা কিছুটা হলেও খর্ব হলো বলে মনে করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, ফেডারেল প্রশাসনে ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় কর্মচারি ছাটাইয়ের মধ্যদিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বচ্ছ্বতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্ণমেন্ট অ্যাফিসিয়েন্সি’কেও কড়া বার্তা দেয়া হলো। ইউএসএইডকে বিলুপ্তির প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তা পুনর্বহালের দাবিতে অজ্ঞাতনামা কিছু কর্মী আদালতে মামলা করেছেন। এবং এমন আদেশের ফলে তারা বিজয়ী হলেন অন্তত: সাময়িক সময়ের জন্যে হলেও। ইলোন মাস্কের এমন আচরণে সংবিধান লঙ্ঘিত হচ্ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন উপরোক্ত বিচারক। এ আদেশে বিচারক অবিলম্বে ইউএসএইডকে পুনর্বহাল ও বরখাস্তকৃত কর্মীদের অফিসে ফিরিয়ে আনার কথাও বলেছেন। এমনকি যাদেরকে সবেতন ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে তাদেরকেও পুনর্বহাল করতে হবে। গতমাসে এসব কর্মচারিকে বরখাস্তের পর অফিসেও সাইনবোর্ডও নামিয়ে ফেলা হয়েছে। মামলার বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত অফিসটি পুনরায় চালু হচ্ছে। 

এদিকে, ইলোন মাস্কের আদেশে ইতিপূর্বে দেড় ডজন সংস্থা থেকে বরখাস্ত হাজারো কর্মীকে ফের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। সোমবার মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর ফেডারেল আদালতে জমা দেওয়া নথিতে তারা এ কথা জানায়। এ আদেশ স্থগিতে তারা আপিলও করেছে। সেখানে রায় পক্ষে এলে এই কর্মীরা ফের চাকরিচ্যুত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সরকারি ব্যয় ও কর্মীবহর ছেঁটে ফেলার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, তারই অংশ হিসেবে প্রথমেই তার প্রশাসন ১৮টি সংস্থার হাজার হাজার শিক্ষানবিশ কর্মীকে বরখাস্ত করে; মেরিল্যান্ডের অপর এক বিচারক এ বরখাস্তের প্রক্রিয়া ‘ঠিক হয়নি’ বলার পর তারা এখন ওই কর্মীদের পুনর্বহাল করছে। সোমবার আদালতে দেওয়া নথিতে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমবারের মতো প্রায় ২৫ হাজার কর্মীকে বরখাস্তের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। নথিতে ১৮টি সংস্থার কর্মকর্তাদের বিবৃতিও আছে, যেখানে তারা বলেছেন, পুনর্বহাল করা কর্মীদের সাময়িক সময়ের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। নথিতে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, অর্থ মন্ত্রণালয় প্রায় ৭ হাজার ৬০০ জনকে চাকরিচ্যুত করেছে, কৃষি মন্ত্রণালয় ছাঁটাই করেছে ৫ হাজার ৭০০ জনকে, স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি। গত সপ্তাহে মেরিল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্ট বিচারক জেমস ব্রেডার গত মাস থেকে শুরু হওয়া শিক্ষানবিশ কর্মীদের এই গণছাঁটাইকে বেআইনি অভিহিত করে পরবর্তী আদেশের আগে বরখাস্তদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে বলেন। তার এই রায়ে সংস্থাগুলোকে কর্মী ছাঁটাই থেকে বিরত রাখা হয়নি, তবে গণহারে ছাঁটাইয়ের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আদালত বলেছে যে এ ধরনের গণছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে সব নিয়মনীতি মেনে চলা উচিত ছিল।

সাধারণত, কোনো দায়িত্বে কেউ এক বছরের কম সময় থাকলে তাকে শিক্ষানবিশ কর্মী ধরা হয়; এদের মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘদিন ফেডারেল সরকারের অধীনে কাজ করছেন। 

মঙ্গলবার এক সংক্ষিপ্ত আদেশে ব্রেডার বলেন, তার ১৩ মার্চের ‘আদেশ মানার ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলো অর্থবহ অগ্রগতি করেছে’ বলেই মনে হচ্ছে। এর আগে তিনি সোমবার বিকালের মধ্যে কর্মী পুনর্বহালে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা জানাতে সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, এ ব্যাপারে ‘উল্লেখযাগ্য অগ্রগতি’ দেখা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।

ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন ১৯টি স্টেট ও ওয়াশিংটন ডিসির এটর্নী জেনারেলদের করা এক মামলার প্রেক্ষিতে ব্রেডার বরখাস্ত কর্মীদের পুনর্বহালের উপরোক্ত রায় দিয়েছেন।

মামলাকারীদের যুক্তি ছিল- হুট করে এমন গণছাঁটাই স্টেটগুলোতে বেকারভাতা দাবি করাদের সংখ্যায় উল্লম্ফন ঘটাবে এবং স্টেটগুলোর দেওয়া সামাজিক পরিষেবার বড় ধরনের চাহিদা তৈরি হবে।

এ মামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মেরিল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান্থনি ব্রাউনের কার্যালয় জানিয়েছে, তারা এখনও ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া নথি পর্যালোচনা করে দেখছে। ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে ব্রেডারের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলও করেছে। সোমবার তারা ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড আপিল আদালতে মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় না আসা পর্যন্ত মেরিল্যান্ড আদালতের নির্দেশ স্থগিত করে দেওয়ার অনুরোধ করেছে।
কৃষি, স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগ এবং জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিএসএ) বরখাস্ত অনেক কর্মী চাকরিতে পুনর্বহালের ইমেইল পাওয়ার কথা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। বেতন পেলেও এখন তাদের কর্মস্থলে যেতে হবে না, তারা বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকবেন। চাকরি ফিরে পাওয়া জিএসএ-র এক শিক্ষানবিশ কর্মীর ধারণা, শেষ পর্যন্ত তার চাকরি যাবেই, তবে আপাতত বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ফিরে পাওয়ায় সাময়িক স্বস্তি মিলল।

‘আমার পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যবীমা আছে, এরপর কী তা খুঁজে বের করার জন্য (পুনর্বহালের আদেশ) খানিকটা সময় দিল,’ বলেছেন সরকারি ভূসম্পত্তি তদারকির দায়িত্বে থাকা এ কর্মী।

গত ১৩ মার্চ ব্রেডারের কয়েক ঘণ্টা আগে স্যান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল বিচারক উইলিয়াম আলসাপও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ৬ সংস্থার বরখাস্ত শিক্ষানবিশ কর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন এ আদেশের বিরুদ্ধেও আপিল করেছে।

সোমবার আলসাপ আদালতের নির্দেশে চাকরি ফেরত পাওয়া শিক্ষানবিশ কর্মীদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, তার আদেশে কর্মীদের কাজে পুনর্বহালের কথা বলা হয়েছে, ছুটিতে পাঠানোর মাধ্যমে সেই নির্দেশনা অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

এর জবাবে মঙ্গলবার জমা দেওয়া নথিতে ট্রাম্পের বিচার মন্ত্রণালয় বলেছে, কর্মীদের কাজে পুরোপুরি পুনর্বহালে সিরিজ ধাপ আছে, ছুটিতে পাঠানো তার প্রথমটি। পুনর্বহালের নির্দেশনা এড়াতে এই ছুটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে না বলেও দাবি তাদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here