‘আইজকা অনেক কষ্ট কইরা রোজা রাখছি। আমি তো সব রোজা রাখতে পারি না। হুজুর কইছে রোজা ফরজ। সব রোজা রাখতাম। আমাগোর জন্য প্রথম রোজার ইফতারি পাঠাইছে বসুন্ধরা গ্রুপ। গত বছরও পাঠাইছিল। অনেক মজার খাওন পাঠায়। আল্লাহ তাগো ভালা করব।’ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কথাগুলো বলছিল রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার মোহাম্মদ হোসাইন। শিশুটির বয়স মাত্র আট বছর। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের এই ইফতারসামগ্রী বিতরণের পর কথা হয় তার সঙ্গে। দুই বছর আগে এই মাদরাসায় ভর্তি হওয়া হুসাইন এখনো গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। তবে কোরআন শরিফের পাঁচ পারা মুখস্থ করে ফেলেছে।
রোজার প্রথম দিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদরাসা ও এতিমখানায় ইফতারি পৌঁছে দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার হাফেজি পড়া ৭০০ এতিম ও দরিদ্র শিক্ষার্থীর মাঝে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন বসুন্ধরা গ্রুপের ইফতারসামগ্রী পেয়ে খুবই আনন্দিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। মাদরাসার বোডিং সুপার ওমর ফারুক বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের জন্য বাড়তি যে খরচ হয়, অনেক সময় এই খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হয়। আমরা চিন্তিত ছিলাম। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর মহোদয় মহানুভবতার হাত বাড়ি দিয়েছেন। রোজায় আমরা তাঁর কাছ থেকে ইফতারসামগ্রী পাব। পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমাদের আজকের চাওয়া, আল্লাহ যেন সায়েম সোবহান আনভীর মহোদয়কে নেক হায়াত দান করেন।’
গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য ইফতারি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার মাঠে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করছে। অল্প বয়সী এসব শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কেউ এতিম, আবার কারো পরিবার দরিদ্র। কিন্তু অল্প সময়ে কোরআন শরিফ মুখস্থ করে নিচ্ছে কোমলমতি এসব শিশু। ইফতারের সময় হয়ে এলে শত শত শিক্ষার্থী অজু করে মাদরাসা ভবনের বিভিন্ন তলায় ইফতারের জন্য সুশৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ হয়ে বসে পড়ে। সবার সামনে পৌঁছে দেওয়া হয় ইফতারি।
মাদরাসা ভবনের চতুর্থ তলায় নজরানার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইফতারি বিতরণের সময় কথা হয় আলী আক্কাস নামের বাগেরহাটের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। মাত্র দুই বছরে কোরআনে হাফেজ হওয়া আক্কাস বলেন, ‘মাদরাসায় আল্লাহর রহমত আছে। প্রতিবছর আল্লাহ ইফতারের ব্যবস্থা করে দেন। এবারও প্রথম দিনই বসুন্ধরা গ্রুপ ইফতারি পাঠিয়েছে। আল্লাহ তাদের ব্যবসা বড় করে দিক।’
পাশে বসে থাকা ছোট পাভেল আহমেদ বলে, ‘আমার বাড়ি গুণবতী (চৌদ্দগ্রাম)। আমার বাবা নাই। মায় এই মাদরাসায় দিয়া গেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো বড় মনের মানুষদের জন্য আমরা মা-বাবা হারা শিশুরা কষ্টে নাই। হুজুররা আমাগোরে আল্লাহর রহমতে ভালো রাখছে।’
কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও রংপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের ইফতারি বিতরণ
এদিকে, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ঢাকার কেরানীগঞ্জে দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা ইফতারি বিতরণ করে বিকেল সাড়ে ৪টায়। উপজেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা, ঢাকা জেলা ডিবি (দক্ষিণ)/ঢাকা জেলা ট্রাফিক (দক্ষিণ), জামিয়াতুল আবরার বাংলাদেশ বসুন্ধরা রিভারভিউ-কেরানীগঞ্জ-ঢাকা, নুরে মদিনান ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসা ও আইনতা জামিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় ছাত্রদের মাঝে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার এতিম, মাদরাসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা পাচ্ছেন বসুন্ধরা গ্রুপের এই বাহারি ইফতারি, যা চলবে মাসজুড়ে।
একইসঙ্গে মানিকগঞ্জে বসুন্ধরা গ্রুপের মাসব্যাপী ভাসমান ও ছিন্নমূল রোজাদারদের ইফতারি বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। রমজানের প্রথম দিন ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুড়ি ইউনিয়নের বানিয়াজুড়ি বাসস্ট্যান্ডের ভাসমান ও ছিন্নমূল রোজাদারদের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রমজান মাসে প্রতিদিন ৩০০ ছিন্নমূলকে ইফতারের খাবার বিতরণ করা হবে। একইসঙ্গে আরো ২০০০ প্যাকেট ইফতারি প্রতিদিন বিভিন্ন মসজিদে দেওয়া হবে।
এছাড়া পবিত্র রমজানের প্রথম দিন রংপুরের আটটি মসজিদের মুসল্লিদের ইফতার করানো হয়েছে। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের আটটি মসজিদের আড়াই শর বেশি মুসল্লিকে উন্নতমানের ইফতার করানো হয়। গজঘণ্টা ইউনিয়নের জয়দেব পশ্চিম সরকার পাড়া, ছালাপাক পশ্চিমপাড়া, জয়দেব সরকার পূর্বপাড়া, ছালাপাক মধ্যপাড়া বায়তুর নূর জামে মসজিদ, জয়দেব সরকার পাড়া, ছালাপাক জামতলা জামে মসজিদ, ছালাপাক আহমদিয়া দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ ও রাজবল্লভ মতলবের বাজার জামে মসজিদের মুসল্লিদের ইফতার করানো হয়।