২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। কয়েক দিন পরই ইউক্রেনের কুপিয়ানস্ক দখল করে নেয় রুশ সেনারা। পরে ইউক্রেনীয় বাহিনী তা আবার পুনঃরুদ্ধার করে। দুই বছর পর আবারও সেই কুপিয়ানস্ক শহর রুশ সেনারা দখল করে নিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সে অনুযায়ী তারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন।
আপনি যদি খারকিভ থেকে দক্ষিণপূর্বে যান, তাহলে রাস্তার ধারে একটা সাইন দেখতে পাবেন, তাতে লেখা, ‘কুপিয়ানস্কি রাই’, তার মানে কুপিয়ানস্ক স্বর্গ। আগে এর সঙ্গে জেলা কথাটাও লেখা থাকত। এখন আর নেই। ইউক্রেন আক্রমণের দিনকয়েক পরেই রাশিয়া এই শহর অধিকার করে নেয়। সেপ্টেম্বরে ইউক্রেন আবার তা দখল করে।
শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরেই এখন রাশিয়ার সেনা রয়েছে। তাদের গোলা শহরে এসে পড়ছে। তাদের বিমান মাঝেমধ্যেই এখানে হামলা করছে। এই শহর তাদের মর্টারের রেঞ্জের মধ্যে এসে গেছে। দুই দেশের সেনার মধ্যে এখন এখানে তীব্র লড়াই হচ্ছে।
‘রাশিয়ার সেনা এলে পালাব’
এই শহর সাতমাস রাশিয়ার দখলে ছিল। এখন ইউক্রেনের সেনার হাতে উপযুক্ত পরিমাণে গোলাবরুদ নেই। ফলে আবার এই শহর রাশিয়া অধিকার করে নিতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রবল হয়েছে।
তাতিয়ানা পেশায় চিকিৎসক। কুপিয়ানস্ক হাসপাতালের সহ-কর্মকর্তা। রাশিয়া আক্রমণ তীব্র করার পরেও তিনি তার কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, “রুশরা যদি এই শহর অধিকার করে, তাহলে আমি পালাব।” আগেরবার রাশিয়া যখন শহর দখল করেছিল, তখন তারা সেখানেই ছিলেন।
তখন তাতিয়ানা রুশদের সঙ্গে তর্ক করেছিলেন, তাদের নির্দেশ মানতে চাননি। আহত রুশ সেনার চিকিৎসা করতে চাননি। তাই এবার তাকে দেখলেই রাশিয়ার সেনারা গুলি করে মারবে বলে তিনি মনে করেন।
তাতিয়ানা এখনও আশা করছেন, ইউক্রেনের সেনা কুপিয়ানস্ক দখলে রাখতে পারবে। তবে হাসপাতালের অবস্থা এমনিতেই খুব খারাপ। আগে যে কর্মী ছিল, এখন তার পাঁচভাগের একভাগ আছে। দক্ষ কর্মীদের অভাব রয়েছে। সমানে গোলাগুলি চলছে। তাই শহরে যারা আছেন, তারা ভয় পাচ্ছেন।
‘জিনিস গোছানো আছে’
অ্যান্ড্রি কুজনিশেঙ্কো ঠিক করে নিয়েছেন রুশ সেনা শহর দখল করলে তিনি আর থাকবেন না। তার স্যুটকেস গোছানো আছে। এই তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষিকাও গতবার রুশ অধিকারের সময় রাশিয়ার সিলেবাস মেনে পড়াতে চাননি।
এখন অবশ্য তিনি বাড়িতেই থাকেন। কারণ, তার মাত্র দু’জন ছাত্রছাত্রী এখানে আছে। বাকিরা ইউক্রেন কিংবা বিশ্বের অন্যত্র চলে গেছে।
তিনি শিক্ষার্থীদের ভিডিওর মাধ্যমে পড়ান। এই শিক্ষিকা জানিয়েছেন, বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে জানতে চায়, তাদের বাড়িঘর এখনও অক্ষত আছে কিনা। আর যদি রুশ সেনারা শহর অধিকার করে, তাহলে স্যুটকেস নিয়ে তিনিও পালাবেন।
সাহায্যের হাত
যারা কুপিয়ানস্ক থেকে চলে যেতে চান, তাদের বিনা পয়সায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে ইউক্রেনের এনজিও ‘রোস টু দ্য হ্যান্ড’।
যেসব গ্রামে নিয়মিত গোলা এসে পড়ছে, বিদ্যুৎ নেই, সেখান থেকে বয়স্ক মানুষদের তারা অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে। এরকমই দু’জন হলেন নাদিয়া ও ভ্যালেন্টিনা। তাদের খারকিভে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে খাবার, বাসস্থান দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের কোনও আত্মীয় নেই। কিন্তু তারা অন্তত গোলাগুলির মুখে আর নেই। সূত্র: ডয়েচে ভেলে