পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বেলুচিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেনে চালানো ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনা আফগানিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গিরা করেছে। ৩৬ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষ হওয়ার পর বুধবার রাতে এমন দাবি করা হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে বেলুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সদস্যরা জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ের সময় ট্রেনটিতে চার শতাধিক যাত্রী ছিল এবং এটি বেলুচিস্তানের দুর্গম পার্বত্য এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল।
বুধবার মধ্যরাতে অভিযান শেষ করার পর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী ৩৩ জন সশস্ত্র হামলাকারীকে হত্যা করেছে এবং যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই হামলায় অন্তত ২৫ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, হামলার সময় আফগানিস্তানে অবস্থানরত জঙ্গি নেতারা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে হামলাকারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়— “গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছে যে, এই হামলা আফগানিস্তানে অবস্থানরত সন্ত্রাসী নেতাদের পরিকল্পিত এবং তারা ঘটনার পুরোটা সময় হামলাকারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছে।”
এছাড়া, পাকিস্তান আশা করে যে, আফগান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না।
পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানিয়েছেন, ট্রেন ছিনতাই ঘটনার পর পাকিস্তানের নিরাপত্তা নীতিতে পরিবর্তন আসবে। পাকিস্তানের টিভি চ্যানেল দুনিয়া নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যে-ই এমন করবে, আমি পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছি, তাকে খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে। জাফর এক্সপ্রেসে হামলার ঘটনা খেলার নিয়ম বদলে দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কাউকেই পাকিস্তানের নাগরিকদের ওপর বিদেশি শক্তির হয়ে হামলা চালাতে দেব না।”
অভিযানের সময়কার পরিস্থিতি বর্ণনা করে পাকিস্তান রেলওয়ে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক গুলাম সারওয়ার আল-জাজিরাকে বলেছেন, “এটি ছিল রকেট ও বুলেটের বৃষ্টি। কিন্তু আমরাও পাল্টা গুলি চালাই।”
তিনি আরও জানান, “গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে হামলাকারীরা ট্রেনে উঠে যাত্রীদের টেনে-হিঁচড়ে নামায়। তারা যাত্রীদের জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে আলাদা করে এবং পাঞ্জাবি জাতিগোষ্ঠীর যাত্রী ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে হত্যা করে। প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই হত্যাযজ্ঞ চলে।”
এর আগে, ট্রেন ছিনতাইয়ের পরপরই এর দায় স্বীকার করেছিল বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। যাত্রীদের জিম্মি করে তারা বেলুচ রাজনৈতিক বন্দী, গুম থাকা অসংখ্য ব্যক্তি ও জাতীয় প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মীদের মুক্তি দিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়।
সূত্র: আমু টিভি