আন্তর্জাতিক মানের দেশি ফুটবলার গড়ে তুলতে হবে: ইমরুল হাসান

0

সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে অভিষেক হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলায়াড় দেওয়ান হামজা চৌধুরীর। তার সঙ্গে নতুন করে যোগ দিচ্ছেন কানাডা লিগ মাতানো শমিত সোম। ইতালি লিগে খেলা ফাহামিদুলও বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়াতে চলে এসেছেন ঢাকায়। আগে থেকেই দলে আছেন জামাল ভূঁইয়া আর তারিক কাজী। হাই প্রোফাইল এসব প্রবাসী ফুটবলারের অন্তর্ভুক্তিতে দেশের ফুটবলে এখন জোয়ার বইছে। তারা একসঙ্গে দলে থাকায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ এখন অন্যতম শক্তিধর দল।

আগামী ১০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ। এতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুর। দলটির র‌্যাংকিং বাংলাদেশ দলের চেয়ে ২২ ধাপ এগিয়ে। এ ম্যাচকে ঘিরেই দেশের ফুটবল অঙ্গনে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে ভালো কিছু করে দেখাবে বাংলাদেশ- এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর।

বর্তমান বাংলাদেশ দলটি নিয়ে বেশ আশাবাদী বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান। হামজার পর বাংলাদেশ দলে শমিতের আগমনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।

গণমাধ্যমকে ইমরুল হাসান বলেন, “শমিতের যে প্রোফাইল, আমাদের দলের জন্য তার সংযোজন নিঃসন্দেহে একটা বিশাল ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমি মনে করি, তার অন্তর্ভুক্তিটা বাংলাদেশ জাতীয় দল অনেক শক্তিশালী হবে নিশ্চয়।”

ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজাকে অনেক উঁচু মানের ও সমৃদ্ধ খেলোয়াড় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হামজা একা বাংলাদেশের ফুটবলের মানটা উঁচুতে নিয়ে যেতে পারবেন না। তার আশপাশে যারা খেলবেন, তাদের মানসম্মতভাবে তৈরি করতে হবে। আর সেজন্য ফুটবলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করতে হবে।”

ইমরুল হাসান বলেন, “হামজার আগমনে আমাদের ফুটবলের ব্র্যান্ডিংটা অনেক বেড়েছে। এই ব্র্যান্ডিংটার কারণে আমাদের ফুটবলের মার্কেটিং খুব সহজ হচ্ছে। ফলে স্পন্সররা অনেক আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটা বিশাল ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কারণ সবকিছুর মূলেই কিন্তু অর্থ। হামজার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় আছে। এটাও আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। তবে শুধু বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে আমাদের ফুটবল র‌্যাংকিংটাকে এগিয়ে নিতে যেতে পারব না। কারণ এমনও সময় হতে পারে যে, দেখা গেল- হামজা ও অন্য যাদের কথা বলছি, তারা এক সময় জাতীয় দলের জন্য অ্যাভেইলেভেল নাও হতে পারে। সুতরাং আমাদের দেশীয় খেলোয়াড়দের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।”

আন্তর্জাতিক মানের দেশি ফুটবলার কীভাবে গড়ে তুলতে হবে- তাও জানালেন ইমরুল হাসান, “এজন্য আমি মনে করি যে- জাতীয় পর্যায়ে আমাদের বেশ কিছু বয়সভিত্তিক দল থাকতে হবে। যে ক্লাবগুলো আছে, প্রত্যেকটিতে দলের অন্তত দুই-তিনটি করে বয়সভিত্তিক দল থাকা উচিত। যদি প্রত্যেকটি দল সিরিয়াস হয়, আমি মনে করি- আমাদের পাইপলাইনের যে ঘাটতি, সেটি অনেক সমৃদ্ধ হবে। এখান থেকে তারা জাতীয় দলকে অনেক দিন সার্ভিস দিতে পারবে। সঙ্গে বিদেশি খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি- এ দুটির সমন্বয়ে আমাদের পক্ষে সম্ভব, সাউথ এশিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়েও আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার।”

হামজা-শমিতদের কি ঘরোয়া ফুটবলে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন? ইমরুল হাসান বলেন, “হামজা চৌধুরী আর শমিতের যে প্রোফাইল এবং পারিশ্রমিক, আমার মনে হয় বাংলাদেশের ক্লাবগুলো তাদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে না (আর্থিক দিক থেকে)। তাদের আমাদের লোকাল লিগে খেলানোটা কষ্টকরই হবে।”

এদিকে, শেষ হওয়া পেশাদার ফুটবল লিগে তৃতীয় হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবার ছন্দপতন হয়েছে দলটির। এই ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ক্লাবটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা ইমরুল হাসান বলেন, “প্রথম কারণের মধ্যে আছে, আমাদের বেশ কিছু খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়েছে। যাদের সার্ভিস আমরা সারা বছরই পাইনি। যেমন- তারিক কাজী, বিশ্বনাথ ঘোষ- এদের কথা বলতে পারি। দ্বিতীয়ত, আমরা যেসব বিদেশি খেলোয়াড়- বিশেষ করে স্ট্রাইকার যাকে এনেছিলাম, সেও ইনজুরিতে পড়ে কাঙ্ক্ষিত নৈপুণ্যটা দেখাতে পারেনি। আমি মনে করি, দেশীয় খেলোয়াড়দের চেয়ে বিদেশিদের অনুপস্থিতি আমাদের বেশি ভুগিয়েছে। সব মিলিয়ে আসলে আমরা লিগ রেসে পিছিয়ে পড়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “সামনের বছরে আমাদের সে লক্ষ্য থাকবে যেন সবকটি শিরোপাই জিততে পারি। তো এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি মনে করি যে, শেষের দুই-একটি যদি পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে কোচের মাধ্যমে পুরো দল ছন্দ ফিরে পেয়েছে। এটা কিন্তু আমাদের পজিটিভ দিক। যেটা হয়তো আমাদের পরবর্তী বছরের ক্ষেত্রে দল গঠনে সহায়তা করবে। কাজ চালিয়ে যাচ্ছি- আশা করি, পরবর্তী বছর আমাদের সমর্থকরা হতাশ হবেন না।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here