আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের পর নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালে ফজলুর রহমানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ। অন্যদিকে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্য প্রসিকিউটররা।
এই আদেশের পর সাংবাদিকদের সামনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী ফজলুর রহমান, তিনি কিছু কমেন্ট করেছিলেন একটা টেলিভিশন টকশোতে। যেটার ব্যাপারে তিনি আদালত নিয়ে অনেকগুলো মন্তব্য করেছিলেন যেগুলোকে কনটেম্পশাস (অবমাননাকর) মনে হয়েছিল। যে কারণে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে একটা আদালত অবমাননার পিটিশন করা হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার রুল জারি হয়েছিল তার উপরে।
তিনি বলেন, আজকে সশরীরে ওনাকে এই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি যেসব বক্তব্য রেখেছেন সেই ব্যাপারে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুযায়ী ফজলুর রহমান তার আইনজীবীসহ আজকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং এর আগেই তিনি যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো তিনি ভুল করে বলেছেন এই মর্মে স্টেটমেন্ট দিয়ে আদালতের ক্ষমা প্রার্থনা করে আগেই একটা আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। আজকে সেটি শুনানি হয়েছে। ফজলুর রহমান নিজে সশরীরে দাঁড়িয়ে আদালতকে… আদালতের কাছে তার রিমোর্স (অনুশোচনা) জানিয়েছেন, অ্যাপোলজি চেয়েছেন, ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আদালত শুধু মন্তব্য করেছেন যে, এই আদালত যেহেতু আইনের দ্বারা পরিচালিত, একজন আইনজীবী হিসেবে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, সিনিয়র পলিটিশিয়ান হিসেবে আদালতের ব্যাপারে মন্তব্য করার ব্যাপারে অধিক সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এবং পলিটিশিয়ানরা যদি সতর্কভাবে কথা না বলেন তাহলে এই রাষ্ট্র কোনোভাবে ফাংশন করতে পারে না। সর্বোপরি যেহেতু তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে, যে কথাগুলো বলেছেন এগুলো তার বলা ঠিক হয়নি, সে কারণে আদালত তার ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনটা মঞ্জুর করেছেন এবং কনটেম্পটের দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এটা ছিল আজকের প্রসিডিংস (কার্যবিবরণী)।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আদালত এটাও বলেছেন যে আইনজীবী অথবা পলিটিশিয়ান তারা যখন আদালত নিয়ে এই ধরনের কথা বলেন জনগণের কাছে একটা ভুল মেসেজ যায়। দুই কারণেই তাদের রেসপন্সিবল হওয়া উচিত। একটা হচ্ছে তারা আইনজীবী, দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে তারা পলিটিশিয়ান। সুতরাং ভবিষ্যতে আদালতের ব্যাপারে বা এই ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে কোনো কমেন্ট করার জন্য ব্যাপারে যে কেউ যেন সাবধান থাকেন এবং যে কেউ যাতে এই ধরনের কথাবার্তা না বলেন এটা সবার জন্য একটা বার্তা। যদিও ওনাকে এক্সওনারেট (দায়মুক্তি) করা হয়েছে প্রসিডিংস থেকে কিন্তু আদালতের এই সমস্ত কমেন্টের মাধ্যমে সবার উদ্দেশ্যে কিন্তু একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে যে- আদালতকে আন্ডারমাইন করা যাবে না, আদালতের অথরিটিকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না এবং আদালত নিয়ে ঘৃণাসূচক কোনো কথা বলা অর্থাৎ আদালতকে কোনো হেটরেটের মুখোমুখি করা যাবে না। যেহেতু এটা আদালত, এটা আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, সেই কারণে সবাইকে এই ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে, এই মেসেজটা আদালত দিয়েছেন আজকে।

