আইসিইউতে একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহ

0

একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে তাকে পাঁচদিন ধরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তার অসুস্থতার খবরটি জানান মেয়ে অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ। মায়ের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে ফেসবুক একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

বিজরী লিখেছেন, ‘বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রত্যেক বেলায় আম্মার শারীরিক অবস্থার অদলবদল হচ্ছে। এই ভালো তো এই অনেক খারাপ। প্রথম দিকে কিছুটা ভালো শব্দটি শুনলে খুব খুশি হয়ে যেতাম, কিন্তু এখন অতটা খুশি হতে পারি না। কেন যেন মনের মধ্যে ভয় ও শঙ্কা কাজ করে, আবার না জানি কী সংবাদ শুনতে হবে।’

বিজরী আরও লিখেছেন, ‘পরিবারের মধ্যমণি আমার মা। করোনায় বাবা চলে যাওয়ার পরই বুঝতে পেরেছি, মাথার উপর কত বড় ছাদটা হারিয়ে শিশুর মত মাকে আঁকড়ে জীবন পার করছি। তার সমস্ত সমস্যা আফটার কোভিড কমপ্লিকেশন্স বলা হচ্ছে। যেখান থেকে লাং অর্ধেকটাই কাজ করে না, ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে তিনবার, স্লিপ অ্যাপমিয়া ভয়ংকর লেভেলের, কিডনির ক্রিটেনিন এখন ৪.২, সুগার এবং প্রেসার হাই, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্সড, সেই সঙ্গে সিভিয়ার ডিপ্রেশন। এতগুলো সমস্যা নিয়ে তাকে মেইনটেইন ও সুন্দর করে টেক কেয়ার করে চলা কম ঝুঁকি ঝামেলার নয়। তারপরও মার চিকিৎসার বিন্দুমাত্র অবহেলা এবং নড়চড় করিনি আমরা। ইনফেকশনের কারণে এখন তার জ্বর আছে, অক্সিজেন চলছে এবং সে অনেকখানি ডিজওরিএনটেড। ডাক্তাররা একে বলছে সেপ্টিসেমিয়া।’

তিনি লেখেন, ‘আইসিইউ’র বাইরে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো লিখছি। যন্ত্রের ভেতর মার জীবনটাকে ঢুকিয়ে অসহায়ের মতো সময় গুনছি। এখানে মাথা কাজ করে না, সময়কে বড্ড দীর্ঘ মনে হয়। পৃথিবীর সকল অর্জনও এখানে ব্যর্থ। কত শত অভিজ্ঞতা, কতশত মানুষের অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ জমে আছে এই করিডোরে। এমনকি আমার নিজের চোখের সামনে। ডাক্তারদের চোখাচোখি হলেই সবাই একই কথা বলে- ধৈর্য ধরুন, চেষ্টা চলছে, দেখা যাক, দোয়া করুন। শুধুমাত্র একজন ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন, এক পার্সেন্টও যদি চান্স থাকে আপনি ধৈর্য হারাবেন না। গত দুই বছরে সেই পার্সেন্টেজই গুনছি, সেই সাথে আমি নিজেই আবিষ্কার করলাম আমি বিশাল এক ধৈর্যশীল নারী। এই ধৈর্য নিয়েই আমাকে যুদ্ধে জয়ী হতে হবে এবারও। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ সহায়।’

উল্লেখ্য, জিনাত বরকতুল্লাহ চার বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী গাজী আলিমুদ্দিন মান্নানের কাছে নৃত্য শেখা শুরু করেন। এছাড়াও বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নৃত্য শিক্ষা লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে জিনাত বরকতুল্লাহ যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফর্মিং আর্টস একাডেমিতে। পরে তিনি শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত প্রোডাকশন বিভাগের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি ২৭ বছর কর্মরত ছিলেন।

১৯৮০ সালে জিনাত বরকতুল্লাহ বিটিভির নাটক ‘মারিয়া আমার মারিয়া’ দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করেন। এরপর ‘ঘরে বাইরে’, ‘অস্থায়ী নিবাস’, ‘বড় বাড়ি’, ‘কথা বলা ময়না’সহ বেশ কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় করেন তিনি। জিনাত বরকতুল্লাহ নৃত্যশিল্পে অবদানের জন্য ২০২২ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। ২০২০ সালের ৩ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জিনাত বরকতুল্লাহর স্বামী টিভি ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here