আইপিএলে ইতিহাস তৈরি করেও স্টার্কের প্রথম পছন্দ টেস্ট ক্রিকেট

0

গত আইপিএলে সাগে ১৭ কোটিতে দল পাওয়ার পর ক্যামেরন গ্রিন পড়েছিলেন এক বিপদে। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যরা এটা নিয়ে মজা করতে করতে অতিষ্ঠ করে তোলেন তরুণ এই অলরাউন্ডারকে। এখন স্রোত উল্টোমুখী। এবারের নিলামের পর কামিন্স, স্টার্ককে সবটুকু ফিরিয়ে দিচ্ছেন গ্রিন। হাসতে হাসতে সেই গল্প শুনিয়ে স্টার্ক বললেন, “ঠিক আছে… সমস্যা নেই, করুক। সে (গ্রিন) তো ১২ মাস ধরে এসব সহ্য করছে!”

এটা আসলে মজার আপদ। এরকম চোখধাঁধানো অঙ্কের পারিশ্রমিক পাওয়ার পর এরকম সব খোঁচাই হয়তো সানন্দে মেনে নেওয়া যায়! এরকম একটা নিলাম অনেক সময় অনেক ক্রিকেটারের জীবন বদলে দেয়। এবার যেমন স্টার্ক। বছরের পর বছর আইপিএল থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এবার যখন ফিরলেন, নিলামের টেবিলে একরকম সুনামি বইয়ে দিলেন।

আইপিএলে মাত্র দুটি মৌসুমই খেলেছেন স্টার্ক। ২০১৪ ও ২০১৫ আসরে খেলেছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে। পারিশ্রমিক ছিল প্রতি মৌসুমেই ৫ কোটি রুপি। পরের দুই মৌসুমে আর নিলামে নাম দেননি। ২০১৮ মৌসুমে আবার নিলামে নাম দেন। ৯ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে তাকে দলে নেয় কলকাতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চোটের কারণে খেলতে পারেননি তিনি।

এরপর আর নিলামেই নাম দেননি মৌসুমের পর মৌসুম। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট মৌসুম শেষে পরিবারকে সময় দেওয়াই তার কাছে বেশি প্রাধ্যান পেয়েছে। তার স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ান নারী ক্রিকেট দলের তারকা অ্যালিসা হিলিও ব্যস্ত সময় কাটান ক্রিকেটে। আইপিএলের সময়টায় তাই একান্তে পারিবারিক সময় কাটানোকেই গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি শরীর ও মনের ওপর চাপ না দিয়ে ফুরেফুরে হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার তাড়নাও ছিল। সব মিলিয়েই আইপিএলের স্রোতে সামিল হননি তিনি। তাতে সম্ভাব্য কোটি কোটি রুপির হাতছানি মিলিয়ে গেছে। তবে এবার ফিরেই যেন সব পুষিয়ে দিলেন।

আইপিএলের ২৪ কোটি ৭৫ লাখের পরও স্টার্কের কাছে সবার ওপরে টেস্ট ক্রিকেট
অবিশ্বাস্য এই পারিশ্রমিকে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত স্টার্ক। তবে এই অর্থের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছেন না তিনি, উড়ে যাচ্ছেন না সময়ের হাওয়ায়। বরং তার আগের ভাবনা, বরাবরের বোধ এখনও অটুট। মেলবোর্নে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বাঁহাতি এই ফাস্ট বোলার বললেন, আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট কম আছে বলেই আইপিএলের নিলামে নাম দিয়েছিলেন তিনি। স্টার্ক বলেন, লাল বলের ক্রিকেটই এখন পর্যন্ত আমার কাছে চূড়ায়। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আমার নিজের চাওয়ার আগে শরীরই আমাকে জানান দেবে (কখন থামতে হবে)।

তিনি আরও বলেন, আগামী বছর একটু সুযোগ আছে (আইপিএল খেলার)। অস্ট্রেলিয়ার এবারের শীত মৌসুমে খেলা খুব বেশি নেই। মার্চে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের পর অস্ট্রেলিয়ান গ্রীষ্মের আগ পর্যন্ত (অক্টোবর) কোনো টেস্ট ম্যাচ নেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও আছে (আগামী জুনে)। আইপিএলে যে মানের ক্রিকেট হয়, তাতে বিশ্বকাপের পথে ভালোভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচির দিক থেকে আগামী বছর ব্যস্ততা বেশ কম।

এবার নিলামে টেবিলে যেমন তাকে নিয়ে মহারণ হয়ে গেল, আগের মৌসুমগুলোয় নিলামে থাকলেও তুমুল লড়াই হতে পারত। তিনি যে মানের বোলার, আইপিএলে বরাবরই তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ার কথা। বিশ্বের বেশির ভাগ ক্রিকেটার যখন আর সব বাদ দিয়ে হলেও আইপিএল খেলতে মরিয়া থাকে, তখন মৌসুমের পর মৌসুম সম্ভাব্য মিলিয়ন ডলারের ডাকে সাড়া না দিয়েও কোনো আক্ষেপ নেই স্টার্কের।

তিনি জানান, যখনই আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, সবসময়ই বলেছি যে, আমি প্রাধান্য দেই টেস্ট ক্রিকেটকে। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার ওই সময়টুকু অ্যালিসার সঙ্গে কাটিয়েছে, পরিবারিক সময় কাটিয়েছি এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য নিজেকে তরতাজা করেছি ও ফিট রাখার চেষ্টা করেছি। কাজেই এটা নিয়ে আক্ষেপ নেই আমার। আমার ধারণা, এটা নিশ্চিতভাবেই টেস্ট ক্রিকেটে সহায়তা করেছে আমাকে। সবসময় বলেছি যে, এত টাকা পাওয়াটা অবশ্যই দারুণ ব্যাপার এবং এবার তা পাচ্ছি। তবে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেই সবসময়ই প্রাধান্য দিয়েছি এবং এটা আমার খেলার উন্নতি প্রভাব রেখেছে অবশ্যই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here