অসময়ে গড়াই নদীপাড়ে ভাঙন, আতঙ্কে শতাধিক পরিবার

0
অসময়ে গড়াই নদীপাড়ে ভাঙন, আতঙ্কে শতাধিক পরিবার

অসময়ে গড়াই নদীর তীরে আকস্মিক ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া ও আগ্রাকুণ্ডা এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিনিয়ত নদীপাড় ধসে পড়ায় বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

‘তোমারে চাচা চলে গেছে সেই মেলা দিন। এহেনে ৩০ বছর ধরে এখানে বাস করছি। কিন্তু আগে কখনো এমন ভাঙন দেখিনি। কিছুক্ষণ পর পরই পাড় ধপাস করে পড়ছে- কখন যে ঘরখানা ভেঙে যায় সেই ভয়ে আছি।’-আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন তেবাড়িয়া এলাকার মৃত সেকেন্দার আলীর স্ত্রী মদিনা খাতুন (৬২)। তার ভাষ্য, নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এবার নদীর মাঝখানে চর জেগেছে। ফলে মূল স্রোত পাড় ঘেঁষে প্রবাহিত হচ্ছে এবং এতে পাড় ভেঙে পড়ছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গড়াই নদীর কূল ঘেঁষেই কুমারখালী পৌরসভা ও উপজেলা শহরের অবস্থান। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেবাড়িয়ার শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আগ্রাকুণ্ডা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় কোনো বাঁধ নেই। এ অংশেই ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩০ বিঘা ফসলি ও কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে হুমকিতে পড়েছে আরও অন্তত ৫০ বিঘা কৃষিজমি ও প্রায় ৩০০ পরিবারের বসতবাড়ি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর পাউবো নদী শাসনের কথা বললেও গত চার-পাঁচ বছরে তেবাড়িয়া-আগ্রাকুণ্ডা এলাকায় কোনো কার্যক্রম হয়নি। ফলে নদীর মাঝে চর জেগে উঠে পাড়ঘেঁষা স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে এবং ভাঙন তীব্র হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, তেবাড়িয়া শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু থেকে আগ্রাকুণ্ডা এলাকার কৃষক ছেইমান শেখের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার নদীপাড় ক্রমাগত ধসে পড়ছে। নদী থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে একটি সিসি ঢালাই সড়ক রয়েছে, যার পাশেই কয়েক শত কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি। বাড়ির পেছনের জমিতে সরিষা, ভুট্টা, তিল, পেঁয়াজসহ নানা ফসল চাষ করা হয়েছে। নদীর মাঝখানে চর জেগে ওঠায় কিনারা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং পাড় ধসে পড়ছে।

আগ্রাকুণ্ডা গ্রামের কৃষক ছেইমান শেখ বলেন, বহু বছর পর এমন ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফসলসহ প্রায় ৩০ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। এখন বসতবাড়ি নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি। সরকারি লোকজন এলাকা পরিদর্শন করলেও এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তেবাড়িয়া গ্রামের চা বিক্রেতা সমীর চাকী বলেন, নদী শুকিয়ে মাঝখানে চর পড়েছে। ফলে পাড় ঘেঁষে স্রোত বইছে এবং কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, সড়ক, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের মুখে পড়েছে। তিনি দ্রুত পাকা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান। তেবাড়িয়া শেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি মোশাররফ হোসেন বলেন, নদীপাড়ে ২২ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ঘাসের চাষ রয়েছে। ভাঙন ঘাসের জমির কাছাকাছি চলে এসেছে। স্থায়ী সমাধানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ভাঙন রোধ বা বাঁধ নির্মাণের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আখতার বলেন, ভাঙনের বিষয়টি অবগত হয়েছেন। পাউবোর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here