টাকাসহ ধরা খাওয়া এলজিইডির গাইবান্ধার সেই নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলামকে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নিজাম উদ্দিনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ছাবিউল ইসলাম কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া, যৌথ বাহিনীর অভিযানে তার গাড়ি থেকে অবৈধ অর্থ উদ্ধার করা হয়, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এ ঘটনায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী তাকে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। বিধি অনুসারে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তী তদন্ত সাপেক্ষে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি নিয়ম অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার রাতে ছাবিউল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গাইবান্ধা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সাঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে গাইবান্ধা জেলায় এসেছিলেন মো. ছাবিউল ইসলাম। সবশেষ তিনি গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন। ২১ বছর ধরে তিনি গাইবান্ধা জেলাতেই কর্মরত।
মাঝখানে তাকে বরিশালে বদলি করা হলেও ২৩ দিনের মাথায় আবারও গাইবান্ধায় চলে আসেন। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে টানা তিন বছরের বেশি থাকার কথা নয়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা থেকে রাজশাহী যাবার পথে নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিল গেট এলাকায় ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকাসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হন প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম। এসময় তার ব্যবহৃত প্রাইভেট কারও জব্দ করা হয়। পরের দিন শুক্রবার বিকেলে পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এ সময় তিনি ওই টাকা তার জমি বিক্রির টাকা বলে দাবি করেন। তবে এর সমর্থনে ছাবিউল কোনো প্রমাণ দিতে না পারায় পরে গত রবিবার নাটোরের আমলি আদালতের বিচারক সারোয়ার জাহান ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করার নির্দেশ দেন।
এদিকে দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলামকে বরখাস্তের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এলজিইডির তালিকাভুক্ত গাইবান্ধার ঠিকাদাররা। ঠিকাদারদের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রজেক্টের উন্নয়নমূলক কাজে নির্বাহী প্রকৌশলী ১০ শতাংশ টাকা ঘুষ ছাড়া ফাইলে সই করতেন না। ঠিকাদাররা বাধ্য হয়ে ঘুষ দিতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডির গাইবান্ধা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালে তার দুর্নীতির বিষয়ে এক ভুক্তভোগী ঠিকাদার দুদকে অভিযোগ করেছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকায় অভিযোগের বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয় নাই।