অভিশ্রুতি বৃষ্টির বাড়িতে শোকের মাতম, পাগলপ্রায় মা

0

ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে বাবা আর কুষ্টিয়ার গ্রামে মায়ের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের মরদেহের জন্য অপেক্ষার শেষ হচ্ছে না তাদের। নানা জটিলতায় এখনো মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। করা হয়নি বাবার ডিএনএ পরীক্ষা।

নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুন ওরফে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর বাবা সবুজ শেখ শুক্রবার থেকে মরদেহের জন্য অধীর অপেক্ষা করছেন। 

তিনি বলেন, প্রথমে আমার ডিএনএ পরীক্ষা করার কথা বলা হলো। পরে তা করা হয়নি। গত রাতে বলা হলো রমনা থানা থেকে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হলে লাশ দেওয়া হবে। এরপর শুক্রবার রাতে থানায় ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করা হয়। তারা শনিবার সকালে দেবেন বলে জানান। কিন্তু দুপুর ১২টা বেজে গেল এখনও ক্লিয়ারেন্স বা মরদেহ কিছুই দেয়া হয়নি।

এদিকে, কুষ্টিয়ার গ্রামে মা-বোন প্রতিবেশীরাও রয়েছেন বৃষ্টির মরদেহের অপেক্ষায়। মায়ের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের পরিবেশ। শুক্রবার দুপুর থেকেই তাদের বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভীড় লেগে আছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়ার গ্রামের বৃষ্টি খাতুন ঢাকায় গিয়ে হয়েছেন অভিশ্রুতি। তিনি কখনো অভিশ্রুতি শাস্ত্রী কখনো অভিশ্রুতি বনিক নাম ব্যবহার করেছেন। কখনো বাবার প্রকৃত নাম সবুজ শেখ, কখনো আবার অভিরূপ শাস্ত্রী হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে ইডেন কলেজে পড়া বৃষ্টি খাতুনের সকল একাডমিক কাগজে তার ও বামা-মায়ের প্রকৃত নামই ব্যবহার হয়েছে।

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি খাতুন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ায়। পিতার নাম সবুজ শেখ। মায়ের নাম বিউটি বেগম। তারা সবাই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। মৃত্যুর খবর আসার পর থেকে বাড়িতে সারাক্ষণ কান্নার রোল লেগে আছে।

বৃষ্টির খালা সাবানা খাতুন বলেন, বৃষ্টি কবে থেকে হিন্দু নাম ধরেছে তা জানি না। সে ইসলাম ধর্মের পরিবারের সদস্য। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। 

তামিম নামে বৃষ্টির কাজিন জানায়, বৃষ্টি ধর্মান্তরিত হয়েছিলো বলে শুনেছি। বিষয়টি বাড়ির লোকজনও জানতো। 

বৃষ্টির মা বিউটি বেগম বলেন, আমার নিজের সন্তান বৃষ্টি। কোন দত্তক নেওয়া নয়। কিন্তু তারপরও আমরা তার লাশ পাচ্ছি না। তার লাশ আমরা গ্রামের বাড়িতে দাফন করব। ধর্ম পরিবর্তন করে নাম নিয়ে বৃষ্টি যত ভুলই করুক না কেন, আমাদের সন্তান আমরা দাফন করব।

খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুজ্জামান জমির মাষ্টার বলেন, বৃষ্টি খাতুন তার বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শতভাগ নিশ্চয়তা দেন বৃষ্টি সবুজ-বিউটির সন্তান। অন্য কোথাও থেকে দত্তক নেওয়া নয়। 

জমির মাষ্টার বলেন, ২০১৫ সালে সে এখান থেকে এসএসসি পাশ করেন। এখানে সকল সচিত্র একাডেমিক রেকর্ডে তার নাম বৃষ্টি খাতুনই দেওয়া আছে। এছাড়াও তার জাতীয় পরিচয়পত্রেও বৃষ্টি খাতুনই দেয়া আছে। এরপর ২০১৭ সালে তিনি কুষ্টিয়া সরকারি গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ইডেন কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি হিন্দু নাম পরিচয় দিয়ে চলাফেরা শুরু করেন বলে জানান স্থানীয়রা।

ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি। সে  মুসলিম। বৃষ্টি ইডেন কলেজে পড়াশোনা করতো। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি। তার বাবা শাবলুল আলম ওরফে সবুজ শেখ ঢাকায় বেসরকারি চাকরি করে। সে তার মেয়ের লাশ আনতে মর্গে গেছে। এলাকা থেকে তার সকল একাডেমিক ও চেয়ারম্যানের সনদপত্র পাঠানো হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here