অকার্যকর হয়ে পড়ছে বহু অ্যান্টিবায়োটিক, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

0
অকার্যকর হয়ে পড়ছে বহু অ্যান্টিবায়োটিক, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ) পরিচালিত এক বছরের বিশ্লেষণে প্রকাশ পেয়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চারজনের একজনের দেহে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের অনেক ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হ্রাস পাচ্ছে।

বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে সোমবার বিএমইউর মিল্টন হলে প্রকাশিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) প্রতিবেদন ২০২৪–২৫। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘এখনই পদক্ষেপ নিন, আমাদের বর্তমানকে রক্ষা করুন, ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন।’

বিএমইউর অণুজীববিজ্ঞান ও রোগপ্রতিরোধবিদ্যা বিভাগ গত এক বছরে ৪৬ হাজার ২৭৯টি রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করে। এতে দেখা যায়—সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, সেফট্রিয়াক্সোন, জেনটামাইসিনের মতো নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ থেকে শুরু করে মেরোপেনেম ও টিগেসাইসিলিনের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত বহু ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হারাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ছে, সুস্থতায় লাগছে বেশি সময় এবং বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি।

প্রতি চার নমুনায় একটিতে জীবাণু— বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ প্রতিরোধী
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার। তিনি জানান, বিশ্লেষণ করা মোট নমুনার ২৪ শতাংশ (১১ হাজার ১০৮টিতে) বিভিন্ন ধরনের জীবাণু পাওয়া গেছে।

প্রস্রাবের নমুনা :
সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ইশেরিশিয়া কোলাই। এই জীবাণুর বিরুদ্ধে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও অ্যামোক্সিসিলিনের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

রক্তের নমুনা :
স্যালমোনেলা টাইফি–র ক্ষেত্রে সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের প্রতিরোধ অত্যন্ত বেশি; এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সেফট্রিয়াক্সোনের কার্যকারিতাও কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিষয়ে আরও গভীর জিনগত বিশ্লেষণ জরুরি।

নিউমোনিয়া ও ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন :
ক্লেবসিয়েলা প্রজাতির বিরুদ্ধে সেফট্রিয়াক্সোন, জেনটামাইসিন ও সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের প্রতিরোধ পাওয়া গেছে মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রায়।

অ্যাসিনেটোব্যাক্টার :
আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো এই প্রজাতির বিরুদ্ধে প্রায় সব অ্যান্টিবায়োটিকই এখন অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এমনকি মেরোপেনেম ও টিগেসাইসিলিনের মতো ‘শেষ ধাপের’ ওষুধেও প্রতিরোধ বাড়ছে দ্রুত।

আইসিইউ–তে ছত্রাক সংক্রমণেও বাড়ছে ঝুঁকি
বিশ্লেষণে দেখা যায়, আইসিইউ–কেন্দ্রিক সংক্রমণে বেশি শনাক্ত হয়েছে ক্যান্ডিডা ট্রপিকালিস ও ক্যান্ডিডা অ্যালবিকানস। বিশেষজ্ঞদের মতে, সি. সিফেরি, সি. প্যারাপ্সাইলোসিস, সি. গুইলিয়ারমন্ডি ও সি. ট্রপিকালিস এর বিরুদ্ধে ফ্লুকোনাজলের প্রতিরোধ দ্রুত বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে চিকিৎসাকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

অতিরিক্ত ও ভুল ব্যবহারে প্রতিরোধের বিস্তার
অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেন, নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া, ডোজ অসম্পূর্ণ রাখা, সামান্য অসুখেও অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ এবং প্রাণিসম্পদে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার—এসব কারণে দ্রুত বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ।

তিনি প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না কেনা, নিয়মিত হাত ধোয়া, টিকাদান, নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুত এবং হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

সূত্র : সমকাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here