স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকীতে মালয়েশিয়ায় কূটনৈতিক সংবর্ধনা

0

যথাযোগ্য মর্যাদা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকী এবং জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। 

বুধবার কুয়ালালামপুরের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এ উপলক্ষ‍্যে একটি কূটনৈতিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। মালয়েশীয় সরকারের মন্ত্রী, ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, কুয়ালালামপুরস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও অন‍্যান‍্য কূটনীতিকগণ, মালয়েশিয়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী ও চেম্বার নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের সদস্যগণ, সাংবাদিক ও বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দসহ চার শতাধিক অতিথি সংবর্ধনায় উপস্থিত হন। 

মালয়েশীয় সরকারের পক্ষে সংবর্ধনায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার নারী, পরিবার এবং কমিউনিটি উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী দাতো সেরি হাজাহ ন্যান্সি সুকরি (Dato’ Sri Hajah Nancy Shukri)। এছাড়া মালয়েশিয়ার মেলাকা প্রদেশের গভর্ণর এবং কুয়ালালামপুরের মেয়র সংবর্ধনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

গেস্ট অব অনার হাজাহ ন্যান্সি সুকরি স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ‍্যে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। এছাড়া সম্মানিত অতিথি ও রাষ্ট্রদূতগণ হাইকমিশনার শামীম আহসান এবং তার সহধর্মিণী মিসেস প্যান্ডোরা চৌধুরীর সঙ্গে কেক কাটা ও ফটোসেশন পর্বে অংশ নেন।

শামীম আহসান তার বক্তৃতার শুরুতেই ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ‘২৪ এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সকল শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতায় আত্মত‍্যাগকারী বীর যোদ্ধাদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। এসময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সংঘটিত হয়েছিল তার পরিপূর্ণ রুপ দিতে এবং ’২৪ এর জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে একটি বৈষম্যহীন, ন‍্যয়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে একযোগে কাজ করার জন‍্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানান। 

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে চমৎকার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে হাইকমিশনার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন‍্য মালয়েশিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সম্পর্ক বহুমাত্রিক এবং তা পারস্পরিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও ঐতিহাসিক বন্ধনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। দু’দেশের মধ‍্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্বালানি, পর্যটন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক বিদ‍্যমান রয়েছে।

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন যা দু’দেশের সম্পর্ককে অন‍্য মাত্রায় নিয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিকট ভবিষ্যতে মালয়েশিয়া সফর করবেন বলে হাই কমিশনার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের হাইকমিশনার রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে মালয়েশিয়ার জোরালো সমর্থনের গভীর প্রশংসা করেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ‍্যে সংযোগ স্থাপনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অত্র অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশকে আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে যোগদানের জন‍্য তিনি আসিয়ানের সকল সদস‍্যরাষ্ট্রের সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন।

বক্তব‍্য শেষে প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। 

অনুষ্ঠানস্থলে সু-সজ্জিত বাংলাদেশ কর্নারে ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন, জি আই পণ্য, রফতানিযোগ্য পণ্য ও হস্তশিল্প প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া জুলাই -আগস্ট অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ক প্রকাশনা কর্নারে স্থান পায় যা অতিথিদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহের সৃষ্টি করে। 

অনুষ্ঠানে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরসহ বাংলাদেশের পর্যটন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিনিয়োগ এবং দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার উপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আপ‍্যায়নপর্বে অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী কাচ্চি বিরিয়ানি, রসগোল্লাসহ বাংলাদেশি খাবার পরিবেশন করা হয়। বিশেষ করে কাচ্চি বিরিয়ানীর স্টলে উপচে পড়া ভিড় ছিল লক্ষ‍্যণীয়। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের জামদানি ও পাটের তৈরি দৃষ্টিনন্দন উপহার প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের দিনটি রমজান মাসে পড়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ১৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আয়োজন করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here