‘বাংলা বললেই কি বাংলাদেশি’, মোদী সরকারের জবাব চাইল আদালত

0
‘বাংলা বললেই কি বাংলাদেশি’, মোদী সরকারের জবাব চাইল আদালত

‌‘শুধু বাংলায় কথা বললেই কি একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশি বলে ধরে নেওয়া যায়? অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কি মেক্সিকো সীমান্তে আমেরিকার মতো প্রাচীর তুলতে হবে?’ গতকাল শুক্রবার এই তীক্ষ্ণ প্রশ্নগুলো ছুড়ে দিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট চরম ভর্ৎসনা করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে। বিচারপতিরা বলেছেন, ভারত একটি বহু ভাষাভাষীর দেশ। তাই সরকারকে এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।

এই ঘটনা মূলত বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলাভাষীদের ওপর হয়রানি এবং আক্রমণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সামনে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস অনেকবার এই অভিযোগ তুলেছেন যে, বাংলাভাষীদের ওপর হামলা হচ্ছে এবং অনেককে বাংলাদেশে ‘পুশ-ইন’ করা হচ্ছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি বিএম পাঞ্চোলির ডিভিশন বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, ‘বাংলায় কথা বলার কারণে কি ভারত সরকার কাউকে বাংলাদেশি বলতে পারে? ভারতের মতো বহু ভাষাভাষীর দেশে শুধু ভাষার জন্য কাউকে বাংলাদেশি বা বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। ’

কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার উদ্দেশে বিচারপতিরা বলেন, ‘আমরা চাই, আপনি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ স্পষ্ট করুন। কেন একটি ভাষা দিয়ে কাউকে বিদেশি বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে?’ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী প্রশ্ন করেন, ‘একজন ব্যক্তি কোন ভাষায় কথা বলেন, তা দিয়ে কি তার নাগরিকত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়?’ 

মেহতা অনুপ্রবেশকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করলে বিচারপতি বাগচী ব্যঙ্গ করে জানতে চান, ‘তাহলে কি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকারও বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্তে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করতে চায়, যেমনটা মেক্সিকো সীমান্তে করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র?’ মামলাটি এখন কলকাতা হাইকোর্টে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্ট দ্রুত শুনানির নির্দেশ দিয়েছে।

অন্তঃসত্ত্বা সোনালীর ঘটনা
এই মামলার সূত্রপাত হয় বীরভূম জেলার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি এবং তার পরিবারকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করার অভিযোগ থেকে। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদ এই অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল। তাদের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতকে জানিয়েছিলেন, বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকেরা আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের অপরাধ তারা বাংলা ভাষায় কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারা পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক। কোনো পদ্ধতি অনুসরণ না করে তাদের ধরে নিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশ-ইন’ করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

তবে আদালত কেবল কেন্দ্রীয় সরকারকেই নয়, শ্রমিক সংগঠনকেও প্রশ্ন করেছে। বিচারপতিরা জানতে চেয়েছেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা তার পরিবার কেন সরাসরি আদালতে আসছেন না? কেন একটি সংগঠন এসে মামলা করছে? 

বিচারপতি বাগচী জানান, দেশের নিরাপত্তা অবশ্যই দেখতে হবে, কিন্তু এই মামলায় দুটি স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে। প্রথমত, শুধু বাংলা ভাষার জন্য কাউকে বিদেশি বলা যায় না। দ্বিতীয়ত, সোনালী বিবির ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল।

গত ২৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন যে, দিল্লির দুটি বাঙালি পরিবারকে আসাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এই পরিবার দুটির মধ্যে একটি হলো বীরভূমের পাইকর থানার সুইটি বিবি, কুরবান শেখ ও ইমাম শেখের। আরেকটি পরিবার মুরারই থানার দানিস শেখ, সোনালী বিবি ও সাবির শেখের।  

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here