ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত, ইসরায়েল-ফ্রান্সের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা

0
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত, ইসরায়েল-ফ্রান্সের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা

আগামী মাসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ফ্রান্স। এ পরিকল্পনার জেরে মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর বিরুদ্ধে ‘ইহুদি বিদ্বেষ’কে উসকে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। এতে ইসরায়েল ও ফ্রান্সের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এলিসি প্রাসাদ (ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) নেতানিয়াহুর অভিযোগকে ‘জঘন্য’ ও ‘ভুল’ বলে অভিহিত করেছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের দফতর আরও বলেছে, “এখন পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে বোঝার ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ার সময়, বিভ্রান্তি বা অপপ্রচারের সময় নয়।”

ম্যাক্রোর উদ্দেশে নেতানিয়াহু একটি চিঠিতে লিখেছেন, গত মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার পর ফ্রান্সে ‘ইহুদি বিদ্বেষ’ অনেক বেড়ে গেছে।

আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের বৈঠকে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে গত মাসে ঘোষণা দেন ম্যাক্রো। ইসরায়েল তখনই এর তীব্র সমালোচনা করে।

চিঠিতে নেতানিয়াহু ম্যাক্রোকে বলেন, “ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে আপনার কথা বলা ইহুদি বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢালার শামিল। এটা কোনও কূটনীতি নয়, বরং ফিলিস্তিনকে তোষণ করা। এটা হামাসের কর্মকাণ্ডকে পুরস্কৃত করবে, জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ার ব্যাপারে হামাসের অবস্থানকে আরও শক্ত করবে। ফরাসি ইহুদিদের ওপর হুমকি সৃষ্টিকারীদের সাহস বাড়বে এবং এখন আপনার দেশের রাস্তায় যে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে, সেটিকে আরও উসকে দেবে।”

গত দুই বছর আগে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক দেশগুলোর তালিকায় ফ্রান্সও যুক্ত হতে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ১৪৫টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে বা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরে ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’-এর পক্ষে কথা বলে আসছে। ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ গাজা শাসনকারী হামাসের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কারণ হামাস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেতানিয়াহুর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে একে ‘অযৌক্তিক  এবং শান্তি বিরোধী’ বলে অভিহিত করেছে।

মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, “ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও তার অপরাধের সমালোচনা করা অথবা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও তাদের স্বাধীনতার অধিকারের প্রতি সমর্থন করাকে ইহুদি বিদ্বেষের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার পুরোনো কৌশলটি ফাঁস হয়ে গেছে এবং এখন এতে কেউই বোকা বনে যায় না।”

একই সঙ্গে নেতানিয়াহুর ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগের জবাবে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দফতর বলেছে, “ফ্রান্স তার ইহুদি নাগরিকদের রক্ষা করে এবং সবসময় করবে।”

ম্যাক্রোর দফতর আরও জানায়, নেতানিয়াহুর চিঠিতে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এর জবাব দেওয়া হবে।

ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী বেনিয়ামিন হাদ্দাদ বলেছেন, “ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই কীভাবে করতে হবে তা ফ্রান্সকে শেখাতে হবে না।”

তিনি বলেন, “আমাদের ইউরোপীয় সমাজকে বিষিয়ে তোলা এই ইস্যুটিকে কেউ যেন নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়ে ফায়দা না নেয়।”

ফ্রান্স ইউরোপের বৃহত্তম ইহুদি সম্প্রদায়ের আবাস। ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ফ্রান্সে ইহুদি বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড ২০২২ সালের ৪৩৬টি থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে এক হাজার ৬৭৬টিতে দাঁড়ায়। এরপর গত বছর তা কিছুটা কমে এক হাজার ৫৭০টিতে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার নেতানিয়াহু অস্ট্রেলিয়ারও সমালোচনা করেছেন। কারণ অস্ট্রেলিয়াও আগামী মাসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে নেতানিয়াহু অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজকে একজন ‘দুর্বল রাজনীতিবিদ’ বলে মন্তব্য করেন । নেতানিয়াহু বলেন, “তিনি (আলবানিজ) ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং অস্ট্রেলিয়ার ইহুদিদের পরিত্যাগ করেছেন।”

অস্ট্রেলীয় সরকার সোমবার উগ্র ডানপন্থি ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ সিমচা রথম্যানের ভিসা বাতিল করার পর আলবানিজকে এভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। সূত্র: ফ্রান্স২৪, এপি, আল-জাজিরা, লা মনডে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here