রাজ ধনেশ অর্থাৎ গ্রেট হর্নবিল। আকর্ষণীয় রঙিন লম্বা ঠোঁট। কালো শরীরে হলুদ রঙের নয়নাভিরাম ছোপ। মানুষের মতোই এদের চোখের পাপড়ি। এক মুহূর্তেই দেখলে মনে হবে শিল্পীর রঙ তুলিতে আঁকা এক বৈচিত্র্যময় চিত্র। এমনই এক পাখি দম্পতির বসবাস রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ব্যাঙছড়ি রিজার্ভ ফরেস্টে (সংরক্ষিত বনাঞ্চল)।
পাহাড়ে এ রাজ ধনেশ দম্পতির অন্যরকম প্রেম। এক সাথে ওড়াউড়ি, চলে খুনসুটি। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত কিংবা বসন্ত। ঋতু যেমনই হোক, সঙ্গীর সঙ্গে জোড়া বেঁধে থাকাটাই স্বভাব এ ধনেশ পাখির। নাম যেমন, তাদের চাল-চলনও ঠিক তেমন। পাহাড়ে রাজ ধনেশ রাজত্ব বহু বছরের। এরই মধ্যে রাজ ধনেশের বৈচিত্র্যময় আচরণে মুগ্ধ হয়েছে স্থানীয়রা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙামাটি কাপ্তাই রেঞ্জের সাবেক কর্মকর্তা এস এম মহিউদ্দীন চৌধূরী বলেন, কাপ্তাই রেঞ্জের ব্যাঙছড়ি বিটে গত ১৫ মাস ধরে দেখছি রাজকীয়ভাবে পাহাড়ের একটি গাছের মগ ডালে বসবাস করা এক জোড়া রাজ ধনেশ। পাহাড়ে এ রাজ ধনেশ দম্পতির লোকারণ্যে যেন এক অন্যরকম রাজত্ব গড়ে তুলেছে। মানুষ আশপাশে থাকলেও নির্রভয়ে চলে তারা। জোড়া বেঁধে থাকতে দেখিছি সব সময়। বোঝা যায় একটি পুরুষ অন্যটি নারী ধনেশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে রাজ ধনেশ অনেকটা বিরল। তবে মিশ্র ও চিরসবুজ বনেই রাজ ধনেশ বাস করে। তাই পার্বত্যাঞ্চলে মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে এ রাজ ধনেশ।
কাপ্তাই বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম পাখিদের একটি। এর ঠোঁটের মাথা থেকে লেজের শেষ পর্যন্ত প্রায় দৈর্ঘ্য ৯৫ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় ৩-৬ কিলোগ্রাম। এদের ঠোঁট নিচের দিকে বাঁকানো আর ঠোঁটের ওপরে আছে শিংয়ের মতো গঠন। এদের ঠোঁট অনেক ভারী মনে হলেও আসলে বেশ হালকা। এদের গায়ের পালক কালো, সাদা আর হলদে। কারো ডানার মাঝ বরাবর আছে লম্বা সাদা দাগ। আর সাদা লেজের শেষের দিকে আছে মোটা কালো ব্যান্ড, যা দেখে অন্যান্য ধনেশ প্রজাতি থেকে এদের সহজেই আলাদা করা যায়। বিশাল বড় এ পাখির মাথা, গলা, ঘাড় এবং বুকের উপরের অংশ হলুদ। খুব জোরে খক-খক-খক শব্দ করে ডাকে এবং ওড়ার সময় ডানা ঝাপটানোর শব্দও বেশ।
স্থানীয় কবির হোসেন বলেন, আমরা দেখেছি টানা বৃষ্টির ঝড়-হাওয়ার মাঝেও এ জোড়া ধনেশ এক সাথে গাছের ডালে বসে আছে। এখন তীব্র শীত। কিন্তু তাদের স্থান পরিবর্তন করেনি। সারাদিন বনে জঙ্গলে ওড়াউড়ি করে একই গাছে এসে বসে। নিজেদের মত করে চলে তাদের জীবন। স্ত্রী ধনেশ পাখি ঘুমালে জেগে থাকে পুরুষ ধনেশ পাখিটি। একজনে খাবার সংগ্রহ করে আনলে দু’জনে ভাগ করে খায়। এ যেন মানুষের চেয়েও ভিন্ন রকম প্রেম।