কর্মক্ষম সন্তানকে হারিয়ে অভাবে দিন পার করছেন শহীদ জুয়েলের মা-বাবা

0
কর্মক্ষম সন্তানকে হারিয়ে অভাবে দিন পার করছেন শহীদ জুয়েলের মা-বাবা

সন্তানের ছবি বুকে নিয়ে এখনও স্মৃতি হাতরে বেড়ান সরকার পতনের আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জুয়েলের মা-বাবা। কর্মক্ষম সন্তানকে হারিয়ে অভাব অনটনে দিন পার করছেন তারা। শহীদ জুলাই যোদ্ধার মা-বাবা হিসেবে সরকারি অনুদান ও ভাতা প্রদানের দাবি জানান জুয়েলের মা-বাবার।

জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গোবিন্দগঞ্জের যুবক জুয়েল রানা (২৭)। জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত নিজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ডাকে সারা দিয়ে সফিপুর আনসার ক্যাম্প এলাকায় নিয়মিত মিছিল মিটিংয়ে মাঠে ছিলেন জুয়েল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন মিছিল করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন জুয়েল।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের শাখাহাতী গ্রামের মমতাজ উদ্দিন ব্যাপারী আর জমিলা বেগম দম্পতির পুত্র জুয়েল রানা। মমতাজ জমিলা দম্পতির দুই পুত্রের, মধ্যে ছোট ছিল জুয়েল রানা। সেই তার বাবা-মাকে ভরণ পোষণসহ সংসার চালাতে যাবতীয় দরকারি সহায়তা দিতেন। ছেলেকে বিয়ে দিয়েছিলেন পাশের গ্রামে। এক সময় ছেলে জীবিকার টানে ঢাকা গিয়ে পোষাক তৈরির কারখানায় চাকুরী নেন দুই কন্যা সন্তানের পিতা জুয়েল। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও দুই ঈদে বাড়ি আসত স্বপরিবারে। তার ইচ্ছে ছিল মেয়েদের পড়ালেখা শেষ হলেই বাড়ি ফিরবে। নিজের টিনের ঘরটি সরিয়ে ইট দিয়ে ঘর দিবে। সাথে বাবা মার থাকার রুমটাও পাকা করবে। কিন্তু, তার শেষ ইচ্ছে পূরণ হয়নি। ৫ আগস্ট মিছিলে পুলিশের বৃষ্টির মত গুলি তার সে স্বপ্ন মূহুর্তে মিশে যায়। গুলিতে সড়কে লুটিয়ে পড়া জুয়েলকে সহযোদ্ধারা হাসপাতালে নিয়েছিল কিন্তু তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ করে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে জুয়েল না ফেরার দেশে চলে যান। তবে তার নিথর দেহটা যেন সেই সব সাধ পূরণ করতে বাড়ি এসেছিল কফিন বন্দি হয়ে। সন্তানের লাশ কবরে নামিছে বৃদ্ধ পিতা মমতাজ ব্যাপারী। এ যে কতবড় কষ্টের, নিজ ঘরের বারান্দার জলচৌকির ওপর বসে তারই বর্ণনা দিচ্ছিলেন জুয়েলের মা-বাবা।

জুয়েল রানা মা জমিলা বেগম বলেন, জুয়েলের নিহত হওয়ার পর অনেক সুবিধা এসেছে কিন্তু সে সুবিধাগুলো তারা সঠিকভাবে পাননি। কারণ জুয়েলের মরদেহ দাফনের দুই দিন পর তার স্ত্রী দুলালি বেগম দুই নাতনিকে নিয়ে পিতার বাড়ি চলে যান। যদিও এখন সে গাজীপুরের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করছেন। তার সাথে বসবাস করছে জুয়েলের বড় মেয়ে। ছোট মেয়েটিকে রেখে গেছে তার নানার বাড়িতে। তিনি বলেন, সন্তান হারানোর দুঃখ বড় কঠিন। তারপরেও যদি মাঝেমধ্যে ওর সন্তান দুটোকে দেখতে পেলে কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম। তা আর হয়ে ওঠে না এই দম্পতির। তিনি আরও বলেন, দূর থেকেই দোয়া করি ওরা যেন ভাল থাকে। তবে সরকারের কাছে আবেদন সারা দেশে জুলাই যোদ্ধাদের সরকার নানাভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে। শহীদ জুলাই যোদ্ধার বাবা-মা হিসেবে সেই প্রাপ্যটা যেন সঠিকভাবে পাই। অথাৎ সরকারিভাবে যে অনুদান ও ভাতা আসবে তার যেন সমবণ্টন করা হয়।

শালমারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, ইউনিয়ন যুবদলের সহ সাংগঠানিক সম্পাদক জুয়েল রানা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দোসরদের গুলিতে শহীদ হয়। তার পরিবার অত্যন্ত গরীব তার বাবা-মা আছে। সংসার চলতো জুয়েলের আয়ে। কিন্ত এখন সে আয় বন্ধ হওয়ায় খুব কষ্টে রয়েছে পরিবারটি। সরকারিভাবে যে সুযোগ সুবিধাগুলি আসে তা যেন সমবণ্টনের মাধ্যমে স্ত্রী, সন্তান এবং বৃদ্ধ-বাবা-মা পায় সে ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

এ ব্যাপারে শালমারা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শহীদ জুয়েলের সরকারিভাবে যে অর্থ ও সুযোগ সুবিধা আসবে তা যেন সমবণ্টনের মাধ্যমে শহীদ জুয়েল রানার বাবা-মা, তার সন্তান পায় সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে সহায়তা দেয়া দরকার তা অব্যাহত থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here